নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আগামী ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ১০ জুলাইয়ের মধ্যে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে বৈধ মনোনয়নপত্রের চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা এবং প্রতীক বরাদ্দ হবে। এরপরই শুরু হবে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি প্রচার। তবে প্রার্থীরা এরই মধ্যে নির্বাচনী আচরন বিধি মেনে অনেকটা কৌশলে গণসংযোগ ও প্রচার চালাচ্ছেন। অনেকে আবার দলীয় কার্যালয়ে কর্মীসভা করছেন। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন। একইভাবে মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি প্রচারনায় থেমে নেই কাউন্সিলর প্রার্থীরাও।
শনিবার দুপুরে মজিবর রহমান সরোয়ার বরিশালে অবস্থানরত কয়েকটি জাতীয় পত্রিকা অফিসের ব্যুরো প্রধান ও স্টাফ রিপোটারদের সাথে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ করেন। এসময় তার সাথে ছিলেন, মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান খান ফারুক, মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আনায়ারুল হক তারিন, মহানগর স্বোচ্ছাসেবকদল সভাপতি মাহাবুবুর রহমান পিন্টু, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেত্রী আফরোজা খানম নাসরিনসহ দলীয় অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্বাচনি কমিটি ঘোষণা করে ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রস্তুতিমূলক সভা, গণসংযোগ চলিয়ে যাচ্ছে। থেমে নেই বিএনপি প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার, জাপা প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস ও বাসদের প্রার্থী ডা. মণীষা চক্রবর্তীর তৎপরতাও। জাপা প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসের মনোনয়ন আপিলে টিকে যাওয়ার পর তিনিও নেমে পড়েছেন গণসংযোগে। নির্বাচন কমিশন মেয়র পদে ৭ জন, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১১৩ জন এবং নারীদের জন্য সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদের জন্য ৩৭ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেছে।
বিএনপি প্রার্থী মজিবর রহমান একবার সিটি ও চারবার সংসদীয় আসনে জয়ী হয়েছেন। এবার আওয়ামী লীগ চমক দেখিয়েছে তরুণ নেতাকে প্রার্থী করে। তারা মেয়র প্রার্থী করেছেন সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে। তবে তার বাবা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি নির্বাচনি সব কার্যক্রম তদারকি করছেন।
বিএনপি ২০ দলীয় জোটকে নিয়ে নির্বাচনে লড়লেও প্রথমে জামায়াতে ইসলামী ‘নাগরিক পরিষদ’ ব্যানারে জেলার আমির মুয়াযযম হোসেন হেলালকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল। পরে বিএনপির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতার পর জামায়াত নির্বাচন হতে সরে দাঁড়িয়ে বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারকে সমর্থন দেয়। এর বিনিময়ে জামায়াত ৫ জন কাউন্সিলর প্রার্থীও প্রতি সমর্থন চেয়েছে। আ’লীগ দলীয়ভাবে কাউন্সিলর প্রার্থী দিলেও বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের পক্ষ হতে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও কাউন্সিলর প্রার্থীকে সমর্থন দেয়নি। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে হওয়ায় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। একইভাবে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসের মতে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তার আত্মীয়-স্বজনরা প্রভাবশালী এবং সরকারে রয়েছেন। আর বিএনপি প্রার্থী দীর্ঘদিন রাজনৈতিক মাঠে রয়েছেন। কাজেই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আশা করেন বিসিসি নির্বাচনে সরকার খুলনা-গাজীপুরের ভূমিকা পালন করবে না। কেননা এখানে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়াটাই আওয়ামী লীগের জন্য বড় জয়।
হেফাজতের বরিশাল জেলা সমন্বয়কারী ওবায়দুর রহমান মাহাবুবকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছে। খেলাফত মজলিশ অধ্যাপক একেএম মাহাবুব আলমও মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এবার বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) আলাদা আলাদা প্রার্থী দিয়েছে। মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি প্রচারনায় থেমে নেই কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। কাউন্সিলর প্রার্থীরাও নির্বাচনী বিধি মেনে যে যার মত করে প্রচারনা অব্যাহত রেখেছে। বরিশাল মহানগরীতে মোট ভোটার ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬। গতবারের চেয়েয়ে এবার ভোটার বেড়েছে ৩০ হাজার ৯০৯। স্বভাবতই এবার প্রথম বারের মতো হওয়া ভোটারসহ তরুণ ভোটার অর্ধেকের চেয়ে বেশি। বিসিসি অন্তর্ভুক্ত ৮টি বর্ধিত ওয়ার্ডে কোনও উন্নয়ন না হলেও তাদেরকে সিটি করপোরেশনের হারেই ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। বিসিসি’র কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন দিতে না পারায় এটি একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থা হতে পরিত্রাণের জন্য অনেকেই শওকত হোসেন হিরণের মতো একজনকে মেয়র দেখতে চান।
Leave a Reply